
কুরআন সম্পর্কে আমাদের মাঝে যে প্রচলিত ধারণা তা হলো- এটি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং জটিল তথ্যভিত্তিক একটি বই বা গ্রন্থ। এখানে রয়েছে নামাজ, যাকাত, রোজা ও হজ্জের নিয়ম-কানুন, মক্কার মুশরিক, মদিনার ইয়াহুদিদের বর্ণনা ও প্রাচীনযুগের নবী-রাসূলদের ইতিহাস। এটি মুসলমানদের অতি মর্যাদাবান একটি গ্রন্থ। যেটির প্রতি হরফ পাঠে রয়েছে ১০ নেকি। সে হিসেবে কুরআন খতম দেয়ার মাঝে রয়েছে অশেষ সওয়াব। সেই সওয়াব হাসিলের জন্য চলে প্রতিযোগীতা। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে এমন সাধারণ বিষয়গুলো যে কুরআনে থাকতে পারে আমাদের ভাবনায় তা কখনো আসেনা। যেমন- কথা বলা, চলাফেরা, আচরণ ইত্যাদি সূক্ষ্ণ বিষয়গুলোর জন্য কুরআনের কী প্রয়োজন। আসলে কী তা-ই? দেখা যাক মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তা'য়ালা নিজে তার সেরা সৃষ্টির দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য কত কিছু শিখিয়েছেন-
** তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও
দীন-দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে, (মানুষের সাথে কথা বলার সময় ভদ্র, মার্জিতভাবে উত্তম কথা বলবে) নামায
প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে। সূরা বাক্বারা : আয়াত-৮৩
** তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও। সূরা বাক্বারা : আয়াত-৪৪ (অন্যকে কিছু সংশোধন করতে বলার আগে অবশ্যই তা নিজে মানবে।)
** তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও। সূরা বাক্বারা : আয়াত-৪৪ (অন্যকে কিছু সংশোধন করতে বলার আগে অবশ্যই তা নিজে মানবে।)
যা
তাদের অন্তরে
নেই তারা
নিজের মুখে
সে কথাই
বলে বস্তুতঃআল্লাহ
ভালভাবে জানেন
তারা যা
কিছু গোপন
করে থাকে। সূরা আল
ইমরান: আয়াত-১৬৭ (সত্যি মনোভাবটা মুখে প্রকাশ করবে। মনে এক, মুখে বিপরীত কথা বলবে
না।)
** হে
মুমিনগণ! আল্লাহকে
ভয় কর
এবং সঠিক
কথা বল। সূরা আল
আহযাব: আয়াত-৭০ (সত্য কথা বলবে। কিছু গোপন না করে, ধোঁকা না দিয়ে স্পষ্ট করে
বলবে।)
** পদচারণায়
মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর
নীচু কর।
নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। সূরা
লুকমান: আয়াত-১৯ (চিৎকার করে, কর্কশভাবে কথা বলবে না। নম্রভাবে নিচু স্বরে কথা
বলবে।)
** যারা
অনর্থক কথা-বার্তায় র্লিপ্ত
নয়। ২৩:৩ তারা যখন অবাঞ্চিত
বাজে কথাবার্তা
শ্রবণ করে,
তখন তা
থেকে মুখ
ফিরিয়ে নেয়
এবং বলে,
আমাদের জন্যে
আমাদের কাজ
এবং তোমাদের
জন্যে তোমাদের
কাজ। তোমাদের
প্রতি সালাম।
আমরা অজ্ঞদের
সাথে জড়িত
হতে চাই
না। ২৮:৫৫ (অনর্থক কথা বলবে না এবং শুনবেনা। যারা অনর্থক
কথা বলে, অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময় নষ্ট করে, তাদের কাছ থেকে সরে যাবে।)
** মুমিনগণ!কেউ
যেন অপর
কাউকে উপহাস
না করে।
কেননা, সে
উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে
এবং কোন
নারী অপর
নারীকেও যেন
উপহাস না
করে। কেননা,
সে উপহাসকারিণী
অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ
হতে পারে।
তোমরা একে
অপরের প্রতি
দোষারোপ করো না এবং একে
অপরকে মন্দ
নামে ডেকো
না। কেউ
বিশ্বাস স্থাপন
করলে তাদের
মন্দ নামে
ডাকা গোনাহ।
যারা এহেন
কাজ থেকে
তওবা করে
না, তারাই যালেম। সূরা হুজরাত: আয়াত-১১ (কাউকে নিয়ে ঠাট্টা,বিদ্রুপ ও
ব্যঙ্গ করা, অন্যায়ভাবে কারো প্রতি দোষারোপ করা, কারো নিন্দা করা এবং অপরকে বাজে নামে
ডাকা চরম অন্যায়।)
** মুমিনগণ!তোমরা
অনেক ধারণা
থেকে বেঁচে
থাক। নিশ্চয়
কতক ধারণা
গোনাহ। এবং
গোপনীয় বিষয়
সন্ধান করো
না। তোমাদের
কেউ যেন
কারও পশ্চাতে
নিন্দা না
করে। তোমাদের
কেউ কি
তারা মৃত
ভ্রাতার মাংস
ভক্ষণ করা
পছন্দ করবে?
বস্তুতঃ তোমরা
তো একে
ঘৃণাই কর।
আল্লাহকে ভয়
কর। নিশ্চয়
আল্লাহ তওবা
কবুলকারী, পরম দয়ালু। সূরা
হুজরাত: আয়াত-১২ (সকল ক্ষেত্রে অনুমান/ধারণা/আন্দাজ করে কথা বলবে না।কারো গোপন
বিষয়ে অনুসন্ধান করবে না। কারো অনুপস্থিতিতে তার নামে কোন বাজে কথা বলবে না।)
** আপন
পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন
জ্ঞানের কথা
বুঝিয়ে ও
উপদেশ শুনিয়ে
উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক
করুন পছন্দ
যুক্ত পন্থায়।
নিশ্চয় আপনার
পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ
ভাবে জ্ঞাত
রয়েছেন, যে
তাঁর পথ
থেকে বিচ্যুত
হয়ে পড়েছে
এবং তিনিই
ভাল জানেন
তাদেরকে, যারা
সঠিক পথে
আছে। সূরা নাহল: আয়াত-১২৫ (মানুষকে বিচক্ষণতার সাথে,
ভদ্রভাবে ও মার্জিত কথার দ্বারা আল্লার পথে আহ্বান করবে। যুক্তি তর্কের সময় তাদের
সাথে উত্তমভাবে, শালীনতার সাথে যুক্তি তর্ক করবে।)
** মিথ্যা
বলা থেকে
দূরে সরে
থাক। সুরা হাজ্জ: আয়াত-৩০
** যদি
কোনো বিষয় সম্পর্কে তোমার সঠিক জ্ঞান না থাকে, তা হলে সে বিষয়ে কথা বলবে না। তুমি
মনে করতে পারো, এসব ছোটখাটো বিষয়ে কথা বললে কি সমস্যা। কিন্তু তুমি জানো না সেটা
আল্লাহর কাছে বড় ভয়ঙ্কর বিষয়। সূরা নূর: আয়াত-১৪ থেকে ১৬।
বি.দ্র. ওপরের কিছুকিছু উপদেশ সংশ্লিষ্ট আয়াতের অংশবিশেষ। অনেকসময় আয়াতের অর্থ পড়ে বোঝা যায় না উপদেশটার সাথে মিল কোথায়। সুতরাং পুরোপুরি বুঝতে ও জানতে সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ সাথে তাফসির পড়ুন।
বি.দ্র. ওপরের কিছুকিছু উপদেশ সংশ্লিষ্ট আয়াতের অংশবিশেষ। অনেকসময় আয়াতের অর্থ পড়ে বোঝা যায় না উপদেশটার সাথে মিল কোথায়। সুতরাং পুরোপুরি বুঝতে ও জানতে সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ সাথে তাফসির পড়ুন।
No comments:
Post a Comment