কুরআনের আলোকে নৈতিকতা ও শিষ্টাচার: পার্ট-১



কুরআনের আলোকে নৈতিকতা ও শিষ্টাচার: পার্ট-১

ধর্ম ও নৈতিকতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি শব্দ । কিন্তু  ড্যানিয়েল ডেন এর মতো কিছু দার্শনিক ও স্ব ঘোষিত নাস্তিকদের কাছে চরম এলার্জি। আবার আধুনিক বিজ্ঞান মনস্ক কিছু মুসলিম এর কাছে অপ্রয়োজনীয় বিষয়। যারা ইসলাম মেনে চলি, তারা আবার কুরআন না বুঝার কারণে এটাও জানিনা যে, নামাজ, রোজা, হাজ্জ, যাকাত, জিহাদ ছাড়াও এই গ্রন্থটি মানবিক নৈতিকতা ও শিষ্টাচার সমৃদ্ধ।  আসুন দেখি নৈতিকতা ও শিষ্টাচার সংক্রান্ত কি রয়েছে এই কুরআনে?

**   তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। ২:৪২

**  তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ধন সম্পত্তি অন্যায়ভাবে খে‌য়োনা এবং শাসকদেরকে উৎকোচ (ঘুষ) দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হবার চেষ্টা করো না। ২:১৮৮

**  যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ব্যয় ক’রে নিজেদের দানের কথা মনে করিয়ে দেয় না আর (দান গ্রহীতাকে) কষ্ট দেয় না, তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট নির্ধারিত আছে, তাদের কোন ভয় নেই, মর্মপীড়াও নেই। ২:২৬২ (কারও কোন উপকার কর‌লে, তা তা‌কে ম‌নে ক‌রিয়ে কষ্ট দেওয়া অন্যায়।)

**  যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়। ৪:১৪০

**  তুমি পরিত্যাগ কর তাদেরকে, যারা নিজেদের দীনকে গ্রহণ করেছে খেল-তামাশা রূপে এবং প্রতারিত করেছে যাদেরকে দুনিয়ার জীবন। ৬:৭০

**  তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। ৫:২

**  অশ্লীল কাজের ধা‌রে কা‌ছেও যা‌বে না, সেটা গোপ‌নে হোক আর প্রকা‌শ্যে। ৬:১৫১

**  প‌বিত্র, প‌রিষ্কার-প‌রিচ্ছন্ন থাক‌বে। ৪:৪৩, ৫:৬, ৯:১০৮ (আয়াত সমু‌হের  উপ‌দেশটুকু নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।)

**  তারা বলে,‘শুধু আল্লাহ্‌র সস্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে খাবার দান করি, আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয় । ৭৬:৯ (কা‌রো উপকার কর‌লে বি‌নিম‌য়ে তার কাছ থে‌কে কোন উপকার এমন‌কি ধন্যবাদও আশা না করা।)

**  ইয়াতীম বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অসৎ উ‌দ্দে‌শ্যে তার সম্পদের কাছেও যেয়ো না। আর ওয়া‘দা পূর্ণ কর, ওয়া‘দা সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ১৭:৩৪


**  মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে৬৬:৬ (নিজেকে ও নিজের পরিবারকে আগে ঠিক করতে হবে।)

**  যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়২৫:৭২ (ফাজলামি ও অনর্থক কাজ কর্মের সম্মুখীন হলে সম্মান বাঁচাতে সেখান থেকে সরে যাবে।)

**  মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে২৪:৩০

**  ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে২৪:৩১

**  তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ? ২৪:১২ (কারও সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনলে তার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখো, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য না পাও । অন্যদের নির্দোষ হিসেবে ভাববে, যতক্ষণ না তার দোষ প্রমাণিত হয়।)

**  মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও৪৯:৬

**  যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে১৭:৩৬

**  নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি (জাতি, বর্ণ, ভাষা, যোগ্যতা ইত্যাদির ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও মানুষকে সম্মান করবে।)১৭:৭০

**  মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও৪৯:১০
তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত/আনুগত্য করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে২৯:১৭

বি.দ্র. ওপরের কিছুকিছু উপদেশ সংশ্লিষ্ট আয়াতের অংশবিশেষ। অনেকসময় আয়াতের অর্থ পড়ে বোঝা যায় না উপদেশটার সাথে মিল কোথায়। সুতরাং পুরোপুরি বুঝতে ও জানতে সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ সাথে তাফসির পড়ুন।



No comments:

Post a Comment