শিক্ষা ও নৈতিকতা

শিক্ষা ও নৈতিকতা



‘শিক্ষা’ ও ‘নৈতিকতা’ দু’টি বহুল আলোচিত ও ব্যবহৃত শব্দ। শব্দ দুটি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মত। মুদ্রার ফ্রন্ট সাইড ও ব্যাক সাইড এর মূল্য যেমন সমান, ঠিক তেমনিই ‘শিক্ষা’ ও ‘নৈতিকতা’ শব্দ দুটি মানব জীবনের মনুষ্যত্ব বিকাশে সমান মূল্যবান। শুধু শিক্ষিত হওয়ার জন্য শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্ব প্রকাশে কাজে লাগেনা। মানবিক নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষা কুশিক্ষার নামান্তর, যা মানুষকে পশুর চেয়েও নিম্নস্তরে নামিয়ে ফেলে। পক্ষান্তরে মানবিক নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের মৱযাদায় অধিষ্ঠিত রাখে। যে শিক্ষা মনুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে স্বার্থপরতা, হিংসা, হানাহানি, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, দূর্নীতি ইত্যাদি অনৈতিক কর্মগুলো করতে শেখায়, ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ বাড়ায়, আজ সে শিক্ষার প্রচার প্রসার সৱবত্র। যে শিক্ষায় বস্তু, সম্পদ, ক্ষমতা ও পার্থিব সূখই জীবনের শেষকথা তা আজ আমরা নিসংকচে গ্রহন করে যাচ্ছি। শিক্ষাকে বর্তমানে ইচ্ছাপূরণের চাবি বানিয়ে নৈতিকতার সাথে সম্পর্কহীন করে তোলা হয়েছে। আজ বিশ্বায়নের জন্য আমরা পাশ্চাত্যের যে শিক্ষা গ্রহন করছি সে শিক্ষা দর্শনগুলো আমাদের যা শেখাচ্ছে তা নিরপেক্ষ নৈতিকতা শিক্ষার নিৱযাস।

Niccolo Machiavelli’s Philosophy "the end justifies the means" (উদ্দেশ্য দিয়েই উপায়ের বিচার করা উচিত)পাশ্চাত্যের এক অন্যতম শিক্ষা দর্শন। এছাড়াও সি এস পার্স, উইলিয়াম জেমস, জন ডিউই সহ অসংখ্য দার্শনিক এর শিক্ষা দর্শনে নৈতিকতাকে সুকৌশলে উপেক্ষা করা হয়েছে।শিক্ষার ফলে কোন ধরণের নৈতিকতা জন্ম নিল সে বিষয়ে আজকের সভ্যতা উদাসীন। অনেক দার্শনিক নৈতিকতাকে ধর্মহীন একটা ব্যাপার হিসেবে তুলে ধরেছেন। অথচ প্রতিটি ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থগুলো নৈতিকতাপূর্ণ। ইসলামে মানবিক নৈতিকতা ছাড়া কোন শিক্ষাই নেই। কিন্তু মানবিক নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষাও সমাজে কোন কল্যান বয়ে আনতে পারেনা যদি তার প্রয়োগকে স্বার্থের জন্য বিসর্জন দেয়া হয়।


অন্যদিকে পরিবারগুলোতে নৈতিকতার চর্চা না থাকায় মানব শিশুর শৈশব শুরু হয় মানবিক নৈতিকতাহীন ভাবে। তার সাথে আধুনিক প্রযুক্তিগুলোর অপব্যবহার শিশুর মানবিক গুণাবলী পরিণত করছে পাষবিকতায়। যার পরিণতি আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি এবং নিজেরাও ভোগ করছি।


যেহেতু শিক্ষার সাথে ‘শিক্ষক’ শব্দটি অতপ্রতোভাবে জড়িত। তাই শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রশ্নে শিক্ষকের ভূমিকাই মূখ্য। শিক্ষক, শিক্ষা ও নৈতিকতা এই তিনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে কোন জাতির সভ্যতা।পৃথিবীর সকল সভ্যতাই এই তিন উপাদানের সম্মিলিত ফসল। শিক্ষকের ভিন্ন দর্শনের কারণে গড়ে ওঠে ভিন্নভিন্ন মতামত। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, আজ শিক্ষক সমাজে নৈতিকতার চর্চা উপেক্ষিত। আজ শিক্ষকের মরযাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যানে ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক তৈরি হচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী ভাবে নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শেখানোর জন্য সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হচ্ছে। তারপরও শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত ও খুন হচ্ছে। সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন হচ্ছে। ধর্ষণ, দূর্ণীতি, পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকান্ডগুলো বেড়েই চলছে। কেন হচ্ছে এসব? ভাবতে হবে সবাইকে।

No comments:

Post a Comment